ছয় বছর আগে রপ্তানি বাণিজ্যে ১০ কোটি ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করার পর
ভালোভাবেই অগ্রসর হচ্ছিল খাতটি। বিদেশে রপ্তানির প্রবৃদ্ধিও ছিল সন্তোষজনক।
কিন্তু গত ২০১০-১১ অর্থবছরে এসে বড় ধরনের ধাক্কা খায় অগ্রযাত্রা। ২০০৯-১০
অর্থবছরের তুলনায় রপ্তানি কমে যায় সাড়ে ২৩ শতাংশ।
মূলত গত বছরের মাঝামাঝিতে আন্তর্জাতিক বাজারে সুতার দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার নেতিবাচক প্রভাবে এমনটি ঘটেছে বলে জানান উ ৎপাদক ও রপ্তানিকারকেরা। তাঁদের অভিযোগ, অনেক স্পিনিং মিলের মালিক তখন সুতা ভারতে পাচার করে দেন। এতে চাহিদামতো সুতা না পাওয়ায় টাওয়েল ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হয়। এ সময় প্রায় দেশের ৫০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান উ ৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই গত অর্থবছরে খাতটি রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়।
তবে এই ধারা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন টেরিটাওয়েল প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকেরা। এ জন্য তাঁরা সুতার নিয়মিত জোগান নিশ্চিত করার ওপর জোর দিচ্ছেন। আর শুধু বিদেশের বাজার নয়, দেশীয় বাজারেও উ ৎপাদকদের মনোযোগ বাড়ছে। কার্যত দেশের টাওয়েলের চাহিদার অধিকাংশই স্থানীয় উ ৎপাদকেরা মেটান। সম্পূর্ণ দেশীয় কাঁচামাল নির্ভর হওয়ায় এর স্থানীয় মূল্য সংযোজনের হারও অনেক বেশি।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, ২০০৩-০৪ অর্থবছর থেকে ২০০৯-১০ অর্থবছর পর্যন্ত এই খাতের রপ্তানি আয়ে সর্বনিম্ন ছয় থেকে সর্বোচ্চ ৮৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত নয়টি অর্থবছরের মধ্যে ২০০৯-১০ অর্থবছরেই টেরি টাওয়েল রপ্তানি করে সর্বোচ্চ ১৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার আয় হয়েছে। যা আগের বছরের ১৩ কোটি ২৫ লাখ ডলারের চেয়ে ১৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি।
ইপিবির তথ্যমতে, ২০০৭-০৮ অর্থবছরের এই খাতের রপ্তানি আয় ছিল ১১ কোটি ২৮ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরের ১০ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের চেয়ে ৩২ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি। তবে রপ্তানি আয়ে সবচেয়ে বেশি ৮৮ দশমিক ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয় ২০০৩-০৪ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরের পাঁচ কোটি ৭৫ লাখ ডলার রপ্তানি আয় হয়। ২০০২-০৩ অর্থবছরে যেখানে এই আয় ছিল মাত্র দুই কোটি ৯৬ লাখ ডলার।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে বর্তমানে শপ, বাথ, গলফ, বিচ, গ্লাস, টি টাওয়েল, ফ্লোর ম্যাট, হজ এহরাম, ন্যাপকিনসহ ৩০ থেকে ৩৫ ধরনের টেরি টাওয়েল পণ্য তৈরি হচ্ছে। এসব পণ্যের বড় বাজার আমেরিকা। এ ছাড়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত সব দেশ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানে রপ্তানি হচ্ছে। দেশের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী নিজেদের ব্যবহারের জন্য বিপুল পরিমাণ টেরি টাওয়েল দেশীয় উ ৎপাদকদের কাছ থেকে কার্যাদেশ দিয়ে ক্রয় করে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামের ইপিজেডে সর্বপ্রথম গ্লোবাল ফেব্রিকস প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান টেরি টাওয়েল তৈরি শুরু করে। পরে ১৯৯০ সাল থেকে রপ্তানিতে যায় প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ব বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় ও সম্পূর্ণ দেশীয় কাঁচামালের কারণে কালের বিবর্তনে খাতটিতে বিনিয়োগ করেন অনেক উদ্যোক্তা।
বর্তমানে চট্টগ্রাম ছাড়াও ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, রূপগঞ্জ, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, কালিয়াকৈর, শ্রীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় টেরি টাওয়েল তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। এগুলোর অধিকাংশ পুরোপুরি রপ্তানিমুখী হলেও দেশীয় বাজারে সরবরাহ করছেন কেউ কেউ।
বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএলএমইএ) তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে শতাধিক প্রতিষ্ঠান টেরি টাওয়েল উ ৎপাদন করছে। এর মধ্যে অ্যাসোসিয়েশনের নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭৬।
বিটিটিএলএমইএ এর সচিব মো. মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশে প্রতিদিন সম্মিলিতভাবে প্রায় আড়াই শ টন টেরি টাওয়েল উ ৎপাদন হচ্ছে। খাতটির সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় অর্ধ লাখ মানুষ জড়িত আছেন।
মুজিবুর রহমান আরও জানান, দেশেই টেরি টাওয়েল তৈরি হওয়ায় বিদেশ থেকে আমদানি বন্ধ হয়েছে। কারণ টেরি টাওয়েল আমদানি করলে ৩৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। অবশ্য গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ী দেশে তৈরি টাওয়েলে বিভিন্ন দেশের সিল-ছাপ্পর মেরে বিক্রি করে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় টাওয়েল আমদানিকারক আমেরিকার চাহিদার প্রায় ৬৫ শতাংশ জোগান দেয় ভারত, চীন ও পাকিস্তান। তবে বাংলাদেশও বাজার পাচ্ছে। পণ্যের মান ভালো হওয়ায় সম্প্রতি মালয়েশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ কার্যাদেশ পাওয়া যাচ্ছে। জাপান থেকেও অনেক ক্রেতা দেশে এসে খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
তবে একাধিক উ ৎপাদক বলেন, টেরি টাওয়েলের প্রধান কাঁচামাল ওয়েস্ট কটন (ঝুট সুতা) চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ পাওয়াই খাতটির বড় সমস্যা। বর্তমানে দেশের স্পিনিং মিলগুলোই এই সুতার জোগান দেয়। তবে অনেক সময় চাহিদা অনুযায়ী সুতা সরবরাহ করেন না স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের ব্যবসায়ীরা সুতার দাম বাড়িয়ে দেন।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, ২০১০-১১ অর্থবছরে টেরি টাওয়েল রপ্তানি আয় হয় ১২ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের ১৫ কোটি ৭০ লাখ ডলারের চেয়ে ২৩ দশমিক ৫২ শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) এই খাতের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন কোটি ৮৮ লাখ ডলার। তবে আয় হয়েছে তিন কোটি ২৯ লাখ মার্কিন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চার কোটি ৭৫ লাখ ডলারের চেয়ে তা প্রায় ৩০ দশমিক ৮০ শতাংশ কম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সংকটকালীন সময়ে ব্যবসায়ীদের দেনদরবারে শেষ পর্যন্ত সরকার প্রতি পাউন্ড ওয়েস্ট কটন চার ডলার ৬০ সেন্ট মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। আগে এই দাম ছিল দুই ডলার ২০ সেন্ট। একই সঙ্গে সরকার সুতা রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। আবার গত সেপ্টেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারেও সুতার দাম কমতে শুরু করে।
বিটিটিএলএমইএর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে সুতা পাচার বন্ধ হয়েছে। ফলে বাজারে এখন মোটামুটি স্থিতিশীলতা এসেছে। সুতার দাম এখনকার মতো স্থিতিশীল থাকলে বছর শেষে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা এবার আর ব্যর্থ হবে না।
মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান আরও বলেন, সুতার দাম বাড়লেও ব্যবসায়ীরা সেই অনুপাতে টাওয়েলের দাম বাড়াতে পারেন না। আমেরিকার ক্রেতারা নিজেরাই হিসাব কষে একটা উ ৎপাদন খরচ বেঁধে দেন। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা তো আছেই। সুতার সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য সাত থেকে ২০ কাউন্টের সুতা টেরি টাওয়েল ব্যবসায়ীদের সরাসরি আমদানির সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান জে এ আনসারী প্রথম আলোকে বলেন, সরকার তৈরি পোশাক খাতের মতো টেরি টাওয়েলেও পাঁচ শতাংশ নগদ সহায়তা দেয়। কিন্তু সম্পূর্ণ দেশীয় কাঁচামালনির্ভর শিল্পটিতে যদি ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে টেরি টাওয়ালকে আলাদা খাত হিসেবে বিবেচনা করার দাবি জানান তিনি।
জে এ আনসারি আরও বলেন, বিগত কয়েক বছরে বড় বড় উদ্যোক্তা খাতটিতে বিনিয়োগ করেছেন। এখন চাহিদামতো বিদ্যু ৎ, গ্যাস ও সুতার সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে প্রতিষ্ঠানগুলো কয়েক গুণ উ ৎপাদন বাড়াতে পারবে। এতে টেরি টাওয়াল খাতে শতভাগ প্রবৃদ্ধি সম্ভব।
শুভংকর কর্মকার, প্রথম আলো | তারিখ: ০৩-১২-২০১
মূলত গত বছরের মাঝামাঝিতে আন্তর্জাতিক বাজারে সুতার দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার নেতিবাচক প্রভাবে এমনটি ঘটেছে বলে জানান উ ৎপাদক ও রপ্তানিকারকেরা। তাঁদের অভিযোগ, অনেক স্পিনিং মিলের মালিক তখন সুতা ভারতে পাচার করে দেন। এতে চাহিদামতো সুতা না পাওয়ায় টাওয়েল ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হয়। এ সময় প্রায় দেশের ৫০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান উ ৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই গত অর্থবছরে খাতটি রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়।
তবে এই ধারা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন টেরিটাওয়েল প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকেরা। এ জন্য তাঁরা সুতার নিয়মিত জোগান নিশ্চিত করার ওপর জোর দিচ্ছেন। আর শুধু বিদেশের বাজার নয়, দেশীয় বাজারেও উ ৎপাদকদের মনোযোগ বাড়ছে। কার্যত দেশের টাওয়েলের চাহিদার অধিকাংশই স্থানীয় উ ৎপাদকেরা মেটান। সম্পূর্ণ দেশীয় কাঁচামাল নির্ভর হওয়ায় এর স্থানীয় মূল্য সংযোজনের হারও অনেক বেশি।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, ২০০৩-০৪ অর্থবছর থেকে ২০০৯-১০ অর্থবছর পর্যন্ত এই খাতের রপ্তানি আয়ে সর্বনিম্ন ছয় থেকে সর্বোচ্চ ৮৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত নয়টি অর্থবছরের মধ্যে ২০০৯-১০ অর্থবছরেই টেরি টাওয়েল রপ্তানি করে সর্বোচ্চ ১৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার আয় হয়েছে। যা আগের বছরের ১৩ কোটি ২৫ লাখ ডলারের চেয়ে ১৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি।
ইপিবির তথ্যমতে, ২০০৭-০৮ অর্থবছরের এই খাতের রপ্তানি আয় ছিল ১১ কোটি ২৮ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরের ১০ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের চেয়ে ৩২ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি। তবে রপ্তানি আয়ে সবচেয়ে বেশি ৮৮ দশমিক ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয় ২০০৩-০৪ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরের পাঁচ কোটি ৭৫ লাখ ডলার রপ্তানি আয় হয়। ২০০২-০৩ অর্থবছরে যেখানে এই আয় ছিল মাত্র দুই কোটি ৯৬ লাখ ডলার।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে বর্তমানে শপ, বাথ, গলফ, বিচ, গ্লাস, টি টাওয়েল, ফ্লোর ম্যাট, হজ এহরাম, ন্যাপকিনসহ ৩০ থেকে ৩৫ ধরনের টেরি টাওয়েল পণ্য তৈরি হচ্ছে। এসব পণ্যের বড় বাজার আমেরিকা। এ ছাড়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত সব দেশ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানে রপ্তানি হচ্ছে। দেশের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী নিজেদের ব্যবহারের জন্য বিপুল পরিমাণ টেরি টাওয়েল দেশীয় উ ৎপাদকদের কাছ থেকে কার্যাদেশ দিয়ে ক্রয় করে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামের ইপিজেডে সর্বপ্রথম গ্লোবাল ফেব্রিকস প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান টেরি টাওয়েল তৈরি শুরু করে। পরে ১৯৯০ সাল থেকে রপ্তানিতে যায় প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ব বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় ও সম্পূর্ণ দেশীয় কাঁচামালের কারণে কালের বিবর্তনে খাতটিতে বিনিয়োগ করেন অনেক উদ্যোক্তা।
বর্তমানে চট্টগ্রাম ছাড়াও ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, রূপগঞ্জ, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, কালিয়াকৈর, শ্রীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় টেরি টাওয়েল তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। এগুলোর অধিকাংশ পুরোপুরি রপ্তানিমুখী হলেও দেশীয় বাজারে সরবরাহ করছেন কেউ কেউ।
বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএলএমইএ) তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে শতাধিক প্রতিষ্ঠান টেরি টাওয়েল উ ৎপাদন করছে। এর মধ্যে অ্যাসোসিয়েশনের নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭৬।
বিটিটিএলএমইএ এর সচিব মো. মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশে প্রতিদিন সম্মিলিতভাবে প্রায় আড়াই শ টন টেরি টাওয়েল উ ৎপাদন হচ্ছে। খাতটির সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় অর্ধ লাখ মানুষ জড়িত আছেন।
মুজিবুর রহমান আরও জানান, দেশেই টেরি টাওয়েল তৈরি হওয়ায় বিদেশ থেকে আমদানি বন্ধ হয়েছে। কারণ টেরি টাওয়েল আমদানি করলে ৩৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। অবশ্য গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ী দেশে তৈরি টাওয়েলে বিভিন্ন দেশের সিল-ছাপ্পর মেরে বিক্রি করে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় টাওয়েল আমদানিকারক আমেরিকার চাহিদার প্রায় ৬৫ শতাংশ জোগান দেয় ভারত, চীন ও পাকিস্তান। তবে বাংলাদেশও বাজার পাচ্ছে। পণ্যের মান ভালো হওয়ায় সম্প্রতি মালয়েশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ কার্যাদেশ পাওয়া যাচ্ছে। জাপান থেকেও অনেক ক্রেতা দেশে এসে খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
তবে একাধিক উ ৎপাদক বলেন, টেরি টাওয়েলের প্রধান কাঁচামাল ওয়েস্ট কটন (ঝুট সুতা) চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ পাওয়াই খাতটির বড় সমস্যা। বর্তমানে দেশের স্পিনিং মিলগুলোই এই সুতার জোগান দেয়। তবে অনেক সময় চাহিদা অনুযায়ী সুতা সরবরাহ করেন না স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের ব্যবসায়ীরা সুতার দাম বাড়িয়ে দেন।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, ২০১০-১১ অর্থবছরে টেরি টাওয়েল রপ্তানি আয় হয় ১২ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের ১৫ কোটি ৭০ লাখ ডলারের চেয়ে ২৩ দশমিক ৫২ শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) এই খাতের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন কোটি ৮৮ লাখ ডলার। তবে আয় হয়েছে তিন কোটি ২৯ লাখ মার্কিন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চার কোটি ৭৫ লাখ ডলারের চেয়ে তা প্রায় ৩০ দশমিক ৮০ শতাংশ কম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সংকটকালীন সময়ে ব্যবসায়ীদের দেনদরবারে শেষ পর্যন্ত সরকার প্রতি পাউন্ড ওয়েস্ট কটন চার ডলার ৬০ সেন্ট মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। আগে এই দাম ছিল দুই ডলার ২০ সেন্ট। একই সঙ্গে সরকার সুতা রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। আবার গত সেপ্টেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারেও সুতার দাম কমতে শুরু করে।
বিটিটিএলএমইএর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে সুতা পাচার বন্ধ হয়েছে। ফলে বাজারে এখন মোটামুটি স্থিতিশীলতা এসেছে। সুতার দাম এখনকার মতো স্থিতিশীল থাকলে বছর শেষে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা এবার আর ব্যর্থ হবে না।
মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান আরও বলেন, সুতার দাম বাড়লেও ব্যবসায়ীরা সেই অনুপাতে টাওয়েলের দাম বাড়াতে পারেন না। আমেরিকার ক্রেতারা নিজেরাই হিসাব কষে একটা উ ৎপাদন খরচ বেঁধে দেন। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা তো আছেই। সুতার সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য সাত থেকে ২০ কাউন্টের সুতা টেরি টাওয়েল ব্যবসায়ীদের সরাসরি আমদানির সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান জে এ আনসারী প্রথম আলোকে বলেন, সরকার তৈরি পোশাক খাতের মতো টেরি টাওয়েলেও পাঁচ শতাংশ নগদ সহায়তা দেয়। কিন্তু সম্পূর্ণ দেশীয় কাঁচামালনির্ভর শিল্পটিতে যদি ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে টেরি টাওয়ালকে আলাদা খাত হিসেবে বিবেচনা করার দাবি জানান তিনি।
জে এ আনসারি আরও বলেন, বিগত কয়েক বছরে বড় বড় উদ্যোক্তা খাতটিতে বিনিয়োগ করেছেন। এখন চাহিদামতো বিদ্যু ৎ, গ্যাস ও সুতার সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে প্রতিষ্ঠানগুলো কয়েক গুণ উ ৎপাদন বাড়াতে পারবে। এতে টেরি টাওয়াল খাতে শতভাগ প্রবৃদ্ধি সম্ভব।
শুভংকর কর্মকার, প্রথম আলো | তারিখ: ০৩-১২-২০১
If you liked the post then,
Click here to Join us for FREE email updates from "www.apparelmakers.org", so that you do not miss out anything that can be valuable to you and your business!!
0 comments:
Post a Comment